গীতিকা কি? গীতিকার বৈশিষ্ট্য ও প্রকার

Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated


 

গীতিকা কি?

ইংরেজি Ballad শব্দটির বহুপ্রচলিত বাংলা অর্থ গীতিকা। Ballad শব্দটি ফারসি Ballet বা নৃত্য শব্দ থেকে এসেছে। প্রাচীনকালে বিশেষ করে ইউরোপে নাচের সাথে যে কবিতা গীত হত, তাকে ব্যালাড বা গীতিকা বলা হত। গীতিকাগুলো মূলত গান হিসেবে গাওয়ার জন্যই রচিত। কিন্তু এতে গানের চেয়ে কাহিনীই প্রাধান্য পায়।

সুতারাং, গীতিকা হল সরল ছন্দ এবং সাধারণ সুরে বর্ণিত অ্যাখ্যানমূলক লোককাহিনী। সুর সহযোগে গীত হলেও গীতিকায় কথাই মূখ্য, সুর গৌণমাত্র। গীতিকার কাহিনীগুলো দৃঢ় সংবদ্ধ। ফলে, গীতিসংলাপ ও ঘটনাপ্রবাহ কাহিনীকে দ্রুত অগ্রসর করে নেয়।
১৮৭৮ সালে জর্জ গ্রীয়ারসনের এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে ‘মানিকচন্দ্র রাজার গান’ প্রকাশিত হওয়ায় পর, অনেকেই গীতিকার প্রতি মনোযোগ দেয়। দীনেশচন্দ্র সেন, চন্দ্রকুমার দে, আশুতোষ চৌধুরি এবং কেদারনাথ মজুমদার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গীতিকার রচনা উদ্ধার করেন।

গীতিকার বৈশিষ্ট্য

গীতিকার অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য একে স্বতন্ত্র‌্যরুপ এনে দিয়েছে। যেমন,


  • গীতিকার কাহিনীগুলো দৃঢ় সংবদ্ধ
  • গীতিকার বিষয়বস্তুতে একটিমাত্র ঘটনা বা সঙ্কটপূর্ণ কাহিনী থাকে। 
  • গীতিকায় কথাই মূখ্য, সুর গৌণমাত্র।
  • ছন্দ ও অলংকার ব্যবহার গীতিকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
  • সংক্ষিপ্ত গীতিসংলাপ ও ঘটনাপ্রবাহ কাহিনীকে দ্রুত অগ্রসর করে নেয়।
  • নাটকীয়তা ও সংলাপধর্মিতা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য। 
  • গীতিকায় কাহিনী ক্রিয়া, চরিত্র, পরিবেশ ও বিষয়বস্তু- এ চারটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে দৃঢ়বদ্ধ।
  • ঘটনার উত্থান-পতনে চমক ও বিস্ময় সৃষ্টি হয়। 
  • অনাবশ্যক ও অপ্রাসঙ্গিক বর্ণনা পরিহার।
  • গীতিকায় দেশি বাদ্যযন্ত্র সহযোগে গতানুগতিক সুরে গীত হয়।
  • গীতিকার চরিত্রসমূহ প্রায়শ একপ্রকার আদর্শায়িত (typed) রূপ লাভ করে।
  • গীতিকায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাহিনীকথক অনুপস্থিত থাকেন। 
  • গীতিকায় থাকবে একধরনের শিশুসুলভ সারল্য।
  • নৈর্ব্যক্তিকতা গীতিকার প্রাণ। যেকোনো গীতিকাই একটি বিশেষ জাতির আশা-আকাঙ্খার কথা প্রকাশ করে।

গীতিকার প্রকারভেদ

বাংলাদেশ থেকে সংগৃহীত গীতিকাগুলোকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা: নাথ গীতিকা, ময়মনসিংহ গীতিকা এবং পূর্ববঙ্গ গীতিকা।

নাথগীতিকা

১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে, স্যার জর্জ গ্রীয়ারসন রংপুর জেলার মুসলমান কৃষকদের মুখে এই গান শুনে তা লিখে নেন। পরবর্তীতে, 'মানিকচন্দ্র রাজার গান' এই নাম দিয়ে এশিয়াটিক সোসাইটির পত্রিকায় তা প্রকাশ করেন। এগুলো এক শ্রেণীর ঐতিহাসিক রচনা। অনেকের মতে, নাথগীতিকাগুলো বিশেষ সম্প্রদায়ের উচ্চ নৈতিক আদর্শ অবলম্বনে রূপায়িত হয়েছিল। কারণ হিসেবে বলা হয়, এতে মানবমনের স্বাধীন অনুভূতির স্বাভাবিক বিকাশ অনুপস্থিত ছিল।


নাথ সম্প্রদায়ের গুরুবাদী যৌগিগণ তাদের গুরুর অলৌাকিক মহিমাকীর্তন উদ্দেশ্যে নাথগীতিকাগুলো দেশ বিদেশে প্রচার করেছেন। নাথগীতিকাগুলো প্রধানত উত্তরবঙ্গেই প্রচার লাভ করেছিল, সেখানে এটি যুগীযাত্রা নামে পরিচিত। নাথ-সম্প্রদায়কেন্দ্রিক গীতিকার দুটি প্রধান দিক রয়েছে। একটি নাথগুরুদের অলৌকিক কাহিনী আর একটি তরুণ রাজপুত্র গোপীচন্দ্রের সন্ন্যাসের কাহিনী।

এসব নাথ গীতিকাগুলো গোরক্ষ-বিজয়, মীনচেতন, মানিকচন্দ্র রাজার গান, গোবিন্দ চন্দ্রের গীত, ময়নামতীর গান, গোবিন্দ চন্দ্রের গান, গোপীচাদের সন্ন্যাস, এবং গোপীচাঁদের পাঁচালী' ইত্যাদি নামে খ্যাত ছিল।

ময়মনসিংহ গীতিকা

ড. দীনেশচন্দ্র সেনের উদ্দ্যোগে বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকে চন্দ্রকুমার দে'র সংগৃহীত এই গীতিকাগুলো ড. দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় ১৯২৩ খ্ৰীঃ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'ময়মনসিংহ গীতিকা' নামে প্রকাশিত হয়। ময়মনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চন্দ্রকুমার দে, আশুতোষ চৌধুরি, মনোরঞ্জণ চৌধুরি, বিহারীলাল সরকার, জসিমউদ্দিন, এবং নগেন্দ্রচন্দ্র দে।

ময়মনসিংহ গীতিকায় গারো, কোচ, হাজং এবং রাজবংশী প্রভূতি মাতৃতান্ত্রিক জনসমাজের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়েছে। সমাজে নারীর স্বাধীন প্রেমের স্বীকৃতি হিসেবে ময়মনসিংহ গীতিকায় নারী চরিত্রের রূপায়ণ লক্ষ্য করা যায়। এর কাহিনীগুলো প্রধানত প্রেমমূলক এবং তাতে নারী চরিত্রই প্রাধান্য লাভ করেছে।

ময়মনসিংহ গীতিকা বিশ্বের ২৩টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ময়মনসিংহ গীতিকা হল- মহুয়া পালা, মলুয়া, কমলা, চন্দ্রাবতী, দেওয়ানা মদিনা, কাজল রেখা, এবং দস্যু কেনারামের খেলা অন্যতম।

পূর্ববঙ্গ গীতিকা

বাংলা গীতিকার তৃতীয় ধারাটি হল পূর্ববঙ্গ গীতিকা। পূর্ববঙ্গ গীতিকার দুই তৃতীয়াংশ কবিতা মৈমনসিংহ জেলার অন্তর্ভুক্ত। অবশিষ্ট গীতিকাগুলো নোয়াখালি, চট্টগ্রাম ইত্যাদি অঞ্চল থেকে সংগৃহীত হয়েছে। পূর্ববঙ্গ গীতিকাগুলো চন্দ্রকুমার দে সংগ্রহ করেন এবং দীনেশচন্দ্র সেনের সম্পাদনায় তা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৬ সালে 'পূর্ববঙ্গ গীতিকা' নামে প্রকাশিত হয়।

পূর্ববঙ্গ গীতিকায় এই অঞ্চলের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের সাথে মিলিয়ে দু:সাহসিক ঘটনাপূর্ণ কাহিনী স্থান পেয়েছে। উল্ল্যেখযোগ্য গীতিকার মধ্যে রয়েছে- নিজাম ডাকাতের পালা, চৌধুরির লড়াই, কাফন চোরা, কমল সদাগর, ভেলুয়া, সুজা ও তনয়ার কথা ইত্যাদি।                                     

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.