ঝরে যাওয়া দুটি ফুল রিতু ও হিয়া

ঝরে যাওয়া দুটি ফুল রিতু ও হিয়া ঝরে যাওয়া দুটি ফুল রিতু ও হিয়া ঝরে যাওয়া দুটি ফুল রিতু ও হিয়া ঝরে যাওয়া দুটি ফুল রিতু ও হিয়া ঝরে যাওয়া দুটি ফুল রিতু ও
Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated

ঝরে যাওয়া দুটি ফুল রিতু ও হিয়া

 ঝরে যাওয়া দুটি ফুল রিতু ও হিয়া

মো: ইকবাল হোসেন, গোপালগঞ্জ: একসঙ্গে দুই সহপাঠী তানজুম হিয়া ও তাসফিয়া জাহান রিতুকে হারিয়ে স্তম্ভিত সহপাঠীরা। অকালে তাদের চলে যাওয়ার শোক কোনভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারছেন না- সহপাঠী, শিক্ষকরা।

গত মঙ্গলবার (১লা আগস্ট) গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) সাঁতার না জানা হিয়াকে লেকে ডুবতে দেখে রিতু এগিয়ে আসেন। পরে হিয়ার সাথে রিতুও লেকের পানিতে ডুবে যায়। পাশ্ববর্তী শিক্ষার্থীদের হইচই'তে প্রায় আধা ঘণ্টা পরে অন্য শিক্ষার্থীরা লেক থেকে তাদের উদ্ধার করে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। অকালে ঝরে গেছে দুটি ফুটন্ত ফুল হিয়া আর রিতু।

তারা দুজনই বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। দুজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গোবরা এলাকায় মেসে থাকতো। হাসি-খুনসুটি আর স্বপ্ন জয়ের অদম্য গতিতে প্রতিদিন ছুটে চলতো এ ঝরা দুই প্রাণ।

সোমবার মৃত্যুর ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও হিয়া ও রিতু বেঁচে নেই—তা মানতে পারছেন না শিক্ষক ও সহপাঠীরা।

কথা হয়, সহপাঠী সাইফুল ইসলাম মারুফের সঙ্গে। মারুফ বলেন, ‘ক্লাসরুমের অন্য রকম এক আবেগ ছিল হিয়া ও রিতু। হাসি, ঠাট্টা, তামাশায় সবাইকে মাতিয়ে রাখতো। আমার আক্ষেপটা একটু বেশি। কারণ ঘটনার দিন আমাকে ও আমার এক বন্ধুকে ওরা (হিয়া ও রিতু) বলেছিল, চল বৃষ্টিতে ভিজি। তিন-চারবার বলেছে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য। ফাজলামো করে বললাম, তোরা যা, আমরা আসছি। এই বলে ওদের পাঠিয়ে দিলাম। পরে খবর পেয়ে লেকে গিয়ে দেখি, সব শেষ। '

সহপাঠী রাজু আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারছি না কী হয়ে গেল। ঘটনার ৩০ মিনিট আগেও আমার সঙ্গে হিয়া ও রিতু প্রচুর দুষ্টুমি করছিলো। খুব ভালো একটা বন্ধুত্ব ছিল। শেষ মুহূর্তে আমরা কিছু করতে পারি নি। আমাদে কোনো ভাষা নেই।' 

বশেমুরবিপ্রবি'র পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক সামসুন্নাহার পপি বলেন, ‘আমি শিক্ষক হিসেবে হিয়া ও রিতুকে এক বছর পেয়েছি। ওরা সব সময় খুব হাসি-খুশি থাকতো। দুজনের সম্পর্ক এমন ছিল যে, সব সময় দেখতাম, একসঙ্গে বসত। ওদের স্টুডেন্ট আইডি নম্বরও পরপর, একজনের ৩৯, আরেকজনের ৪০ ছিল। সবচেয়ে বড় কথা, খুবই হাসি-খুশি, চঞ্চল, মিশুক ছিল ওরা। কিন্তু কখনো বেয়াদবি করতো না, খুবই ভদ্র প্রকৃতির দুটি মেয়ে ছিল। ওরা এভাবে চলে যাবে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়।'

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মাসকাটা গ্রামের বৃদ্ধ ইবারাত আলী মোল্লা রিতুর নানা। "অনেক স্বপ্ন ছিল রিতুকে নিয়ে। ছোটবেলা থেকে সে আমাদের এখানে থাকে। বড় হয়ে বড় সরকারি কর্মকর্তা হবে। সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল আমাদের। কান্নাজড়িত কণ্ঠে  বৃদ্ধ নানা এভাবেই নাতনি তাসপিয়া জাহান রিতুকে নিয়ে তাঁদের স্বপ্নের ভাঙার হৃদয়বিদারক কথা জানান।  

রিতু চাঁদপুর সদরের বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের খেরুদিয়া গ্রামের শেখ আবদুর রবের মেয়ে। রিতু বাগেরহাট নানা বাড়িতে বড় হয়েছে।  ঘটনার পর থেকে বাবা শেখ আবদুর রব ও মা রূপা বেগম প্রায় বাকরুদ্ধ। রিতুর মৃত্যুতে গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

ওদিকে খুলনা নগরের বয়রা মধ্যপাড়ার ১৮ নম্বর মিয়া বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম। মোবাশ্বেরা তানজুম হিয়ার জন্য কাঁদছেন সবাই।

মেয়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে হিয়ার বাবা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমার একটি মেয়ে। আমি একটু অসুস্থ হলেই মেয়েটি সারা রাত মাথার কাছে বসে থাকতো। যখন যা দরকার, নিজেই করে দিতো। সেই মেয়েটি হারিয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হিয়া আমাকে বলেছিল- বাবা, ডাক্তার হতে পারেনি। তাতে মন খারাপ করো না। এবার চারের মধ্যে চার পাওয়ার পড়া পড়ব। কিন্তু তার আগেই সব শেষ।”

হিয়াকে বাঁচাতে গিয়ে বান্ধবী রিতুর মৃত্যু প্রসঙ্গে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ওদের বন্ধুত্ব সেই স্কুলজীবন থেকে। কেউ কাউকে ছাড়া থাকতে পারত না। জেনেশুনে বন্ধুর জন্য এমন জীবন বিসর্জন কয়জনের পক্ষে সম্ভব?’

হিয়াদের প্রতিবেশী স্কুল শিক্ষক শিকদার ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘মেধাবী মেয়েটির মৃত্যু কোনোভাবেই আমরা মেনে নিতে পারছি না। এমন মৃত্যু থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ জরুরি।’

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.